প্রথমেই বলে রাখি, EPS (Employee Permit System) একটি লম্বা সময়ের প্রক্রিয়া। এর অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। প্রতিটি ধাপেই রয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রথম সময়ে যে নিয়ম কানুন ছিল তা বর্তমানে অনেকখানি পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে যে নিয়ম কানুন আছে ভবিষ্যতে হয়তোবা পরিবর্তন করা হবে। কিন্তু মূল শর্ত ও প্রক্রিয়াগুলো তেমনই আছে। নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে যথাসম্ভব প্রতিটি ধাপ বর্ণনা করার চেষ্টা করছি।
১ম ধাপঃ
EPS ভিসার প্রথম ও প্রধান শর্ত হল, কোরিয়ান ভাষার উপর দক্ষতা থাকা। এই ভাষা যে কোন ভাবেই শিখতে পারেন। সরকার স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট বা অনলাইনে ইত্যাদি ভাবে। ভাষার উপর পরীক্ষা দুইভাবে হয়। ১) রিডিং ২) লিসেনিং মোট ১০০+১০০=২০০ নাম্বারে। পরীক্ষা ২ টা গ্রুপে নেয়া হবে ১। ভাষা পারদর্শী কোটা ২। লটারির মাধ্যমে ভাষা অপারদর্শী কোটা।
২য় ধাপঃ
যারা ভাষা পারদর্শী তাদের ভাষা শিক্ষার পর আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে সার্কুলারের। সার্কুলার BOESL (Bangladesh Overseas Employment & Services Ltd) এর মাধ্যমে বিভিন্ন পত্রিকাতে ও বোয়েসেল ওয়েবসাইটে (www.boesl.gov.bd) পাবলিশ হবে । সার্কুলার হলে আপনাকে প্রাইমারী ভাবে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অনলাইনে রেজিস্ট্রাশন করতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে তা স্পষ্ট করে সার্কুলারে লিখা থাকবে। রেজিস্ট্রাশন সম্পূর্ণ হলে আপনাকে কনফার্মেশন কপি দেওয়া হবে। যা আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে।
৩য় ধাপঃ
লটারির মাধ্যমে ভাষা অপারদর্শী কোটা। যদি চাহিদার চেয়ে অনেক বেশী রেজিস্ট্রেশন হয়। তখন সমস্ত রেজিস্ট্রেশন থেকে কোটা সমপরিমান লোক লটারির মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়ে থাকে। এই লটারিতে অনেকে ভাষা না জানা ব্যাক্তিরা চান্স পেয়ে যায় আবার ঠিক তেমনি ভাষার উপর ভালোভাবে পড়াশুনা করা দক্ষ ব্যাক্তিরাও বাদ পড়ে যায়। এটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড সিলেকশন, সুতরাং আপনার বা অন্য কারো ক্ষমতা থাকে না।
৪র্থ ধাপঃ
যেকোনো (১। ভাষা পারদর্শী কোটা ২। লটারির মাধ্যমে ভাষা অপারদর্শী কোটা) মাধ্যমে সিলেকশনের পর সব ধরণের কাগজপত্র একত্রিত করে আপনাকে স্বশরীরে বোয়েসেল গিয়ে মূল রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সিরিয়াল নম্বর আপনাকে সবসময় সংরক্ষণ করতে হবে। এডমিট কার্ড সংগ্রহ করা, টাকা পে অর্ডার করা। সবকিছু ঠিকঠাক করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
৫ম ধাপঃ
UBT (Ubiquitous Based Test) পরীক্ষা হবে। ট্যাবের সামনে বসে রিডিং ও লিসেনিং একসাথে পরীক্ষা দিতে হবে। পরিক্ষার শেষেই প্রাপ্ত নম্বর জানা যাবে। পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত ভালো হলে পরবর্তী ধাপে এগুতে হবে।
৬ষ্ঠ ধাপঃ
ভাষা পরীক্ষার পর স্কীল টেস্ট নামে আরও একটি পরীক্ষা হবে। স্কিল টেস্ট কেমন ও কিভাবে হবে তা অভিজ্ঞ ইন্সট্রাক্টরের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। সময়ের সাথে সাথে নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে, হয়তো আরও হবে।
৭ম ধাপঃ
সব পরীক্ষায় পাশ করার পর PRS (Point Recruiting System) এর মাধ্যমে কোটা সমপরিমান লোক রেখে বাকিদের ডিলেট করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ যারা পয়েন্টে এগিয়ে থাকবে তারা কোটাতে চান্স পাবে এবং বাকিরা বাদ পড়ে যাবে। সুতরাং দুইশতে ১৩০ পেয়েও বাদ পরার আশাংকা রয়েছে অপরদিকে দুইশতে ১১০ পেয়েও টিকে যেতে পারে।
৮ম ধাপঃ
PRS এ টিকে যাবার পর আপনাকে নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে। তারপর আপনার মেডিক্যাল চেকআপ ও অন্যান্য আরও কিছু চেকআপ করতে হবে, পে অর্ডার সহ আরও কিছু টুকিটাকি কাজ করতে হবে এবং সেই রিপোর্টগুলো আবারো বোয়েসেল গিয়ে জমা দিতে হবে এবং জব অফার নামক একটি ফর্ম পূরণ করে আসতে হবে।
৯ম ধাপঃ
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে রোস্টারভুক্ত করা হবে। এবং আপনি (www.eps.go.kr ) গিয়ে দেখতে পাবেন। এখানে একটা আইডি খোলার পর আপনার সব ইনফরমেশন এখানে পাওয়া যাবে। আপনার কাজ হবে কিছুদিন পর পর আইডি তে ঢুকে খোজ খবর নেওয়া। এরপর কোরিয়ান মালিকের উপর নির্ভর করবে। আপনার ছবি, বয়স, বায়োডাটা দেখে মালিক পছন্দ করার পর আপনার ভিসা ইস্যু হবে এবং HRD Korea এর মাধ্যমে BOESL কে জানিয়ে দিবে। বোয়েসেল কর্তৃপক্ষ মোবাইল, ম্যসেজ বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দিবে।
১০ম ধাপঃ
আপনাকে জানানোর পরে অর্থাৎ CCVI কনফার্ম হওয়ার পর আপনাকে সপ্তাহব্যাপী একটা ট্রেনিং দেওয়া হবে। এরমধ্যে ফ্লাইট ডেট কনফার্ম করতে হবে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট করতে হবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট করতে হবে এবং কোরিয়ান মালিক প্রদত্ত কন্টাক্ট পেপার ও সাইন করতে হবে।
১১তম ধাপঃ
কোরিয়া আসার পূর্বে বোয়েসেল অফিসে একটা ব্রিফিং দেওয়া হবে। ক্যাপ ও টুপি বোয়েসেল কর্তৃপক্ষ আপনাকে প্রদান করবে এবং ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা সাক্ষর করতে হবে। এবং নির্দিষ্ট দিনে কোরিয়া গমন করতে হবে।
১২তম ধাপঃ
কোরিয়া আসার পর আপনাকে KBiz Center এ আরেক দফা ট্রেনিং করতে হবে এরপর মালিক এসে আপনাকে নিয়ে যাবে। ব্যাস আপনি এখন EPS এর গর্বিত একজন সদস্য।
প্রয়োজনীয় কিছু তথ্যঃ
১। পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডি এবং অন্যান্য সকল কাজগপত্রে আপনার নাম, ঠিকানা, বাবার নাম ও জন্ম তারিখ হুবহু থাকতে হবে। কোন প্রকার সমস্যা থাকলে আগেই ঠিক করে নিবেন। এই কারণে আপনি বাদ পরতে পারেন।
২। এই EPS এর প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে আপনার পড়াশুনা, ব্যাবসা বাণিজ্য ও চাকুরী নিয়মিত করতে থাকবেন। কারণ প্রতিটি ধাপেই রয়েছে অনিশ্চয়তা। যে কোন কারণে, অল্প কারণে কিংবা বিনা কারনেই আপনি বাদ পরতে পারেন। এটি অনেকটা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। কোরিয়াতে যেতেই হবে বা কোরিয়াতেই যাব, এমন মনোভাব থেকে দূরে থাকা ভালো।
৩। EPS এর প্রক্রিয়ার কোন ধাপেই নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়না। পে অর্ডার ও স্ট্যাম্পের ৩০০ টাকা ছাড়া কারো সাথে টাকা লেনদেন করবেন না।
৪। EPS এর সমস্ত প্রক্রিয়ার নিয়মাবলী পরিবর্তনযোগ্য। সুতরাং সময়ের সাথে সাথে সবসময় আপডেট থাকতে হবে।
বিঃদ্রঃ- আমার সাধ্যমতে যতটুকু পেরেছি তততুকু লিখার চেষ্টা করেছি। বাকি কোন সমস্যা থাকলে বা ইনফরমেশনে কোন ভুল থাকলে অবশ্যই আমাকে অবগত করবেন।